দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়রন ট্যাবলেট খেয়ে রেবা খাতুন নামের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সোমবার (২৮ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে স্কুলে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার পর অস্বুস্থ হয়ে পড়ে সে। এর কিছুক্ষণ পরই মৃত্যু হয় তার।
তবে আয়রন ট্যাবলেট নাকি শারীরিক অন্য অসুস্থতার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত করতে পারেননি চিকিৎসকরা। এ ঘটনায় ফারজানা, আসমা, সুমাইয়া ও ঊর্মিলা নামের আরও চার শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। মৃত রেবা খাতুন সদর উপজেলার উত্তর সমশপুর গ্রামের সাগর হোসেনের মেয়ে।
এদিকে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিথিলা ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। স্কুলপড়ুয়া কিশোরী মেয়েদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরণে ইউনিসেফের অর্থায়নে সাতদিন পর পর একজন শিক্ষার্থীকে একটি করে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ানো হচ্ছে।
রেবা খাতুনের সহপাঠী জান্নাতুল জানায়, সকালে হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সব শ্রেণির ছাত্রীদের একটি করে আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ান শিক্ষকরা। এর কিছুক্ষণ পর ১১টার দিকে রেবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার মুখ ও নাক দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে। তখন আমরা বাজারের একটি ওষুধের দোকানে নিলে তারা দ্রুত সদর হাসপাতালে নিতে বলেন। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক রেবাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অপর সহপাঠী সামিন বলে, আমরা রেবাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় কোনো শিক্ষক ছিলেন না। তখন ঠিক বুঝতে পারছিলাম না ওকে নিয়ে কী করবো। এক পর্যায়ে দিশেহারা হয়েই হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে একজন সংবাদকর্মী বড় ভাইয়ের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে রেবার বাড়ি ও স্কুলে জানাই সে মারা গেছে।
রেবার মা স্বপ্না বেগম বলেন, আমার স্বামী দিনমজুর। আমার দুই মেয়ে, রেবা সবার বড়। সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে স্কুলে যায় রেবা। এরপর স্কুল থেকে বলে মেয়ে একটি ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তখন স্কুলে ছুটে গিয়ে দেখি সেখানে মেয়ে নেই। পরে হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার মেয়ের মৃতদেহ নিয়ে তার বান্ধবীরা দাঁড়িয়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, কী কারণে আমার মেয়ের মৃত্যু হলো এর সঠিক বিচার চাই। ভালো মেয়ে স্কুলে গেলো আর পেলাম মৃত অবস্থায়। এর পেছনে শিক্ষকদের কোনো অবেহলা আছে কি না তা খুঁজে বের করে যেন দোষীদের শাস্তি দেওয়া হয়।
রেবার খালা সুমাইয়া বলেন, রেবা বাড়ি থেকে না খেয়ে স্কুলে গিয়েছিল। তখন শিক্ষকরা একটি ট্যাবলেট খেতে বললে রেবা বলেছিল আমি খেয়ে আসিনি। তখন শিক্ষকরা বলে ট্যাবলেট খাও কিছু হবে না। এই শিক্ষকদের গাফিলতিতেই রেবা আজ চিরদিনের মতো হারিয়ে গেলো। দোষী শিক্ষকদের যেন আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।
হাটগোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোছা. নাসিমা খাতুন বলেন, আমাদের বলা হয়েছিল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মাধ্যমে ট্যাবলেট খাওয়াতে। সেভাবেই খাইয়েছি। এখানে আমাদের কোনো গাফিলতি ছিল না। তবে কী কারণে সে মারা গেছে তা জানি না।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আশরাফুজ্জামান সজীব বলেন, মেয়েটিকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তার মুখ ও নাকে ফেনা বের হচ্ছিল। ক্লিনিক্যাল কিছু স্যাম্পল পাওয়ার পরই বলা যাবে কেন তার মৃত্যু হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রারানি দেবনাথ বলেন, সাধারণত আয়রন ট্যাবলেট খেয়ে কেউ মারা যায় না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে শুধু পেটে ব্যথা কিংবা অ্যাসিডিটি বা পাতলা পায়খানা হতে পারে। তবে সে আগে থেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল কি না তার খোঁজ নিচ্ছি। তার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। সেখানে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন অফিসের রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের মেডিকেল অফিসার ও ইউনিসেফের একজন প্রতিনিধি রয়েছেন।