বাবুগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি: আদম ব্যবসায়ীর পাল্লায় পরে সৌদি আরব গিয়ে ৪ মাস যাবৎ নিখোঁজ বাবুগঞ্জের মো. ছালাম হাওলাদার (৩৫)। তিনি উপজেলার ভূতেরদিয়া ইউনিয়নের পূর্ব কেদারপুর গ্রামের মৃতঃ মোসলেম হাওলাদারের ছেলে। বেচে আছেন না মরে গেছেন তা জানেন না তার পরিবার। ঋন ও ধার করে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা খরচ করে তাকে সৌদি পাঠায়। ঋণ ও ধার পরিশোধে করতে ব্যর্থ হয়ে নিঃস্ব পরিবারটি।
নিখোঁজের স্ত্রী বৃষ্টি আক্তার জানান, ছালাম ঢাকাতে সেনেটারীর কাজ করতেন। এতে তাদের সংসার মোটামুটি ভালোই চলছিলো। হঠাৎ সবুজ নামে তার এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন জুয়েল নামের এক লোক সৌদি আরব লোক পাঠায়। সেই অনুযায়ী দালাল জুয়েলের সাথে ছালামের যোগাযোগ হয়। ২০২২ সালে চুক্তি হয় ৫ লক্ষ টাকায় সৌদি আরব নিয়ে বাংলাদেশী টাকার ৪৫ হাজর টাকা বেতনে কোম্পানির কাজ দিবেন। চুক্তি অনুযায়ী ৫ লক্ষ টাকার মধ্যে ভিসা আকামা ও থাকা কোম্পানি বহন করবে এমনটাই বলেন দালাল এবং তিন মাসের মধ্যেই ছালামকে সৌদি আরব পাঠায়।
কিন্তু সৌদি গিয়ে দালাল আকামা নিয়ে টালবাহানা শুরু করে। আকামা তৈরির জন্য ছালামের কাছ থেকে আরো ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নেয়। চুক্তিতে ছালামের সাথে কোম্পানির কাজের কথা উল্লেখ্য থাকলেও তাকে ভবন নির্মাণ (কনস্ট্রাকশন) কাজের শ্রমিক হিসেবে কাজ দেওয়া হয়, তাও নিয়মিত নয়। কোন মাসে ১৫ দিন কোন মাসে ১০ দিন কিংবা ১ সপ্তাহ করে ৩/৪ মাস কাজ করেন। এরপর ছালামকে কোম্পানির কাজে দিবে বলে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আসছিলেন। এমন করেই চলতে থাকে সৌদি প্রবাসী ছালামের প্রবাসী জীবন। পরিবারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন এবং উপার্জনের উপর ভিত্তি করে মাঝে মাঝে কিছু টাকাও পাঠাতেন তিনি। তবে চলতি বছরের মে মাসের ২৬ তারিখ তার সাথে শেষ কথা হয়েছিলো পরিবারের। তারপর থেকে ছালামের সাথে আর কোন যোগাযোগ হয়নি।
তবে হঠাৎ একদিন নিখোঁজের স্ত্রী বৃষ্টি আক্তারকে দালাল জুয়েল পেয়াদার ফোন করে বলেন, ছালাম গুরুতর অসুস্থ এবং তিনি হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি আছেন। সেই মর্মে চলতি বছরের জুন মাসের ১২ তারিখ ও আগস্ট মাসের ৮ তারিখ পরিবারের ইমু নাম্বারে দুটি ভিডিও চিত্র পাঠান। তারপর থেকে দালাল জুয়েলকেও আর মুঠো ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে একমাত্র উপার্জনকারিকে হারিয়ে নিঃস্ব ও অনাহারে জীবন যাপন করছেন এবং ঋণ ও ধার দেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন পরিবারটি। সৌদি প্রবাসী ছালাম হাওলাদার ৪ সন্তানের জনক। তার পরিবার তার সন্ধান চেয়ে দেশে ফেরত আনার জন্য সরকারের কাছে আকুতি করেছেন।
জুয়েল পেয়াদার কালকিনি উপজেলার রমজানপুর ইউনিয়নের চর পালোরদী গ্রামের আঃ হাকিম পেয়াদার ছেলে। তিনি পেশায় আদম ব্যবসায়ী এবং দালাল। অনুপায় হয়ে জুয়েল এর গ্রামের বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে তার বাড়িতে গেলে জুয়েলের পরিবারের তার অবস্থানের ঠিকানা দিতেও অপারগতা স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে আদম ব্যবসায়ী জুয়েলের সাথে একাধিকবার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া তাকে যায়নি।