স্টাফ রিপোর্টার: বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া গৃহবধূ সাদিয়া আক্তার সাথী আত্মহত্যা করেননি, তার স্বামী তাকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন তার পরিবার।
তারা জানিয়েছেন, তাকে (সাদিয়া সাথী) তার স্বামী বরিশাল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল মাইনুল ইসলাম হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখে স্বজনদের খবর দিয়েছেন। আর গতকাল সোমবার লাশ উদ্ধারের পর থেকেই অভিযুক্ত মাইনুল পলাতক। এ ঘটনায় মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নিহতের বাবা সিরাজুল ইসলাম। তবে পুলিশ এখনো মামলা নেয়নি।
সাদিয়ার গ্রামের বাড়ি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নে।
নিহত সাদিয়া সাথীর বড় বোনের স্বামী বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারী জানান, সাদিয়া আক্তার সাথীর আত্মহত্যার কোনো কারণ নেই। কিছুদিন পূর্বে ব্যাংকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৩ লাখ টাকা নেয় তার স্বামী মাইনুল । কিন্তু পরীক্ষা দেওয়ার পরে চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চায় সাদিয়া। প্রথমাবস্থায় ৮ লাখ টাকা ফেরত দিলেও বাকি ৫ লাখ টাকা ফেরত দেননি। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। হত্যাকাণ্ডের আগের দিন অর্থাৎ রোববার (৬ মার্চ) মাইনুল বাসায় এসেছিল। সাদিয়ার মেয়ে সাইমুন আমাদের জানিয়েছে, মাইনুল এসে ঝগড়া করে এবং সাদিয়াকে মারধর করে।
চেয়ারম্যান নূরে আলম বেপারী আরো বলেন, মাইনুলই আমাদের সবাইকে কল করে জানায় সাদিয়া আত্মহত্যা করেছে। এমনকি আমার স্ত্রী সাদিয়ার বড় বোনকে নিয়ে আসার জন্য এক রিকশায় উঠেয়ে মাঝপথে নেমে গিয়ে লাপাত্তা হয় মাইনুল।
আমাদের প্রশ্ন হলো মাইনুল যদি ওই সময়ে অফিসে থেকে থাকে তাহলে সে কীভাবে জানলো সাদিয়া বাসায় আত্মহত্যা করেছে? আমরা চাই ঘটনার সঠিক তদন্ত করা হোক। এবং লাশ উদ্ধারের সময় কোতোয়ালি থানা পুলিশের এসআই রেজা সাদিয়ার লেখা একটি ডায়রি, মোবাইল ফোন নিয়ে গেছেন। সেগুলোতে কি লেখা আছে তা আমরা দেখতে চেইলে তিনি বাঁধা দেন।
নিহত সাদিয়ার বাবা সিরাজুল ইসলাম বলেন, সাদিয়া আত্মহত্যা করলে ওর ফ্লাটের দরজা ভেতর থেকে আটকানো থাকার কথা। কিন্তু পুলিশ এবং আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা খোলা পেয়েছি। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড তা স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়। আমি চাই আমার মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার হোক। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। যদি আত্মহত্যা করত তাহলে তার সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আসতো কেন? আমার ধারণা সাইমুনকে স্কুলে দিয়ে এসে বাসায় একা ছিল সাদিয়া। তখন তাকে নির্যাতন করে মারধর ও হত্যা করে সিলিংফ্যানের সঙ্গে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। তিনি আরো বলেন, সাদিয়ার সঙ্গে স্বর্ণালী নামে সাবলেটে আরেক মেয়ে থাকতো। ঘটনার পর তাকেও খুঁজে পাচ্ছি না। পুলিশ চেষ্টা করলে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটন করতে পারে।
ওদিকে লাশ উদ্ধারকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি সাদিয়া সাথীর স্বামী চাকরি করেন। কিন্তু কিসে চাকরি করেন তা জানতে পারিনি। তবে মঙ্গলবার সকালে জানতে পেরেছি মাইনুল ইসলাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করেন।
ওদিকে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, এক বছর পূর্বে প্রেমের সর্ম্পকের সূত্র ধরে সাদিয়া সাথীর বিয়ে হয়। এরপরে তারা বরিশালেই বাসা ভাড়া করে থাকতেন। সাদিয়া সাথীর চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিয়েছে। সেই টাকা ফেরত চাওয়ায় নির্যাতন করা হতো। এর আগে মাইনুলের নির্যাতনে কয়েকবার সাদিয়া সাথী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার নির্যাতন করে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে। অভিযুক্ত মাইনুল ইসলাম পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার উত্তর বাদুরী গ্রামের সোহরাব ফরাজীর ছেলে।
কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম লিখিত অভিযোগের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, সাদিয়া সাথীর পরিবার তাদের অভিযোগের বিষয়টি আমাদেরকে জানিয়েছে। তবে আমরা অপমৃত্যু মামলা গ্রহণ করেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, সোমবার (৭ মার্চ) দুপুরে বরিশাল নগরীর বৈদ্যপাড়া ডা. শাহজাহান হোসেনের ভবনের পঞ্চম তলার একটি ফ্লাট থেকে বিসিএস পরীক্ষার্থী সাদিয়া আক্তার সাথী নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়। সাদিয়া সাথীর ৮ বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। জানা গেছে, ওই সন্তান তার প্রথম সংসারের সন্তান।