স্টাফ রিপোর্টারঃ বরিশালের বাবুগঞ্জে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে বাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে স্ত্রীর বিরুদ্ধে। এমনকি পরকীয়া প্রেমিক দিয়ে মারধরের হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং স্বামীর বাড়ি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। উপায়ান্তর না পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়েছেন স্বামী।
এ ঘটনাটি ঘটেছে বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের রাজগুরু (নতুনচর) গ্রামে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে রাজগুরু গ্রামের শাহজাহান বেপারীর মেয়ে মোসাঃ নাছিমার সাথে একই গ্রামের আঃ আজিজ মৃধার ছেলে নূর হোসেনের সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহ হয়। বিবাহের পরে নূর হোসেন ও নাছিমার দাম্পত্য জীবন ভালো ভাবেই চলছিল। তাদের পরিবারে ১৫ এবং ৯ বছরের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। নূর হোসেন ছেলে সন্তান ও পরিবার নিয়ে ঢাকাতে বসবাস করতেন। গত দুই বছর আগে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি রাজগুরু (নতুনচর) এলাকায় চলে আসেন এবং কয়েক শতাংশ জমি ক্রয় করে সেখানে ঘর নির্মান করেন।
কিন্তু জীবিকার জন্য নূর হোসেন তার স্ত্রী ও সন্তানরা গ্রামের বাড়িতে রেখে চাকরিতে ঢাকায় চলে যান। নূর হোসেন বাড়িতে না থাকার সুবাদে তার স্ত্রী নাছিমা বেগমের সাথে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে একই এলাকার মোঃ মতলেব হাওলাদার এর ছেলে কাওছার হাওলাদার সাথে। কাওছার ও নাছিমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ককে স্থায়ী সম্পর্কে রুপ দিতে শুরু হয় নতুন পরিকল্পনা। আর সে জন্যই পরকীয়া প্রেমিক কাওছার তার প্রেমিকা নাছিমা বেগম কে দিয়ে ডিভোর্স দেওয়ায় স্বামী নূর হোসেনকে।
নাছিমা বেগম গত মে মাসে তার স্বামী নূর হোসেন কে ডিভোর্স দেয়। ডিভোর্স দিয়েও ক্ষান্ত হননি নাছিমা বেগম। তিনি তার পরকীয়া প্রেমিক দিয়ে স্বামী নূর হোসেন কে হুমকি প্রদান করে আসছেন এবং নূর হোসেন কে বাড়ি থেকে তাড়ানোর পায়তারা করে আসছেন বলে অভিযোগ করেছেন নূর হোসেন। গতবছর ডিসেম্বর মাসে গ্রামবাসী নাছিমা ও কাওছারকে হাতেনাতে ধরে মারধর করে স্থানীয় ইউপি সদস্য হতে তুলে দেন।
ভুক্তভোগী স্বামী নূর হোসেন বলেন, আমাকে ছোট রেখেই আমার মা মারা যায়। পরে আমার বাবা ও ভাইয়েরা ঢাকা চলে যায় আর আমাকে আমার মামা শাহজাহান বেপারীর বাড়িতে রেখে যায়। পরে আমি মামার বাড়িতেই বড় হই। বড় হওয়ার পরে আমার পরিবার ও আমার মামার পরিবারের সিদ্ধান্তে আমার মামা শাহজাহান বেপারীর মেয়ে মোসাঃ নাছিমার সাথে আমার বিবাহ দেয়। বিবাহের কয়েক বছর পর থেকেই আমার স্ত্রী নাছিমা বেগম এবং তার ফুফাতো ভাই কাওছার এর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ নিয়ে বহুবার আমি আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের জানিয়েছি। তারাও কোন সমাধান করতে পারেনি। কারো কথাই আমার স্ত্রী শুনে না। তারই ধারাবাহিকতায় গত মাসে আমার স্ত্রী তার প্রেমিক কাওছার এর মাধ্যমে আমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেয়। এমনকি কাওছার আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে। গতবছর ডিসেম্বর মাসে একদিন রাতে তারা দুজন একসাথে ধরা পরেছিলো এলাকাবাসীর কাছে। বর্তমানে আমি আমার স্ত্রী এবং তার প্রেমিক এর ভয়ে এখন বাড়িতে যেতে পারছি না। এমনকি আমার স্ত্রী আমার টাকায় তৈরি করা ঘর এখন তার দাবি করছে। আমি এখন নিরুপায়। আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানাচ্ছি।
নাছিমা বেগম বলেন, কাওছার আমার আত্নীয় হয় কিন্তু সে আমার বাড়ি আসে না। এমনকি তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমার স্বামী আমার ও সন্তানদের খোঁজ খবর নেয় না। তাই আমি তাকে ডিভোর্স দিয়েছি।
এদিকে পরকীয়া প্রেমিক কাওছারের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নায়, তবে একটি অডিও ক্লিপ শোনা যায় স্বামী নুর হোসেনের চাচার কাছে পরকীয়া প্রেমিক কাওছার, নাছিমা বিয়ে করেছেন বলে দাবি করেন এবং তার সাথে যা হচ্ছে তা বৈধভাবেই করছেন। এবং নুর হোসেনকে ১৫ দিনের মধ্যে ডিভোর্সের কাগজ দিয়ে দিবেন বললেন পরকীয়া প্রেমিক কাওছার।
নাছিমা বেগমের বাবা শাহজাহান বেপারী বলেন, আমার জামাই নূর হোসেন এর কোন দোষ নেই। ও অনেক ভালো ছেলে। ও স্বাভাবিকভাবে খরচ দিয়ে আসছে এবং খোঁজ খবর নিয়েছে। আমি আমার মেয়েকে অনেকবার বুঝাইছি কিন্তু আমার মেয়ে কারো কোন কথাই শুনে না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ ওবায়দুল হক জানান, নূর হোসেন তার পারিবারিক সমস্যা নিয়ে রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান মৃধা মুঃ আক্তার-উজ-জামান মিলন এর কাছে অভিযোগ করেছেন। চেয়ারম্যান মহোদয় আমাকে ও নারী ইউপি সদস্যা রহিমা বেগম, নূর হোসেন এর বাড়িতে পাঠিয়েছেন। তাদের সাথে কথা হয়েছে। তাদেরকে দুইদিন সময় দেয়া হয়েছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই তারা একটা সুন্দর সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবেন।