স্টাফ রিপোর্টার: বিদ্যালয়ের মাঠে চলছিল বিয়ের উৎসব। চলছিল অতিথি আপ্যায়ন। ঠিক একই সময়ে শ্রেণিকক্ষে ক্লাসও করেছে শিশু শিক্ষার্থীরা। এমন ঘটনা ঘটেছে বরিশাল নগরীর আমানতগঞ্জের মোফাজ্জেল হোসেন খান বালিকা মাধ্যমিক এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। দুটি বিদ্যালয় একই ক্যাম্পাসে অবস্থিত। মাঠও একটি।
এই মাঠে বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী ইয়ার উদ্দিন সিকদারের মেয়ে সাবরিনা আক্তার সুমির বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। এজন্য মোফাজ্জেল হোসেন খান বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়। অনুষ্ঠান চলাকালে ক্লাস নেওয়া হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো মাঠ জুড়ে প্যান্ডেল করা হয়েছে। সেখানে কয়েকশ’ লোকের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। প্রাথমিকের শ্রেণিকক্ষে তখন তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলেছে।
স্থানীয়রা জানান, চরমোনাই ইউনিয়নের পশ্চিম চরহোগলা গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে বিকাশ আহমেদ বাপ্পির সঙ্গে ইয়ার উদ্দিন সিকদারের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় মোফাজ্জেল হোসেন খান বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে। কয়েকদিন আগ থেকেই বিদ্যালয় মাঠে বিয়ের প্যান্ডেলসহ অন্যান্য সাজ-সজ্জা চলে। বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় রান্নার আয়োজন। বৃহস্পতিবার ছিল বিয়ের মূল অনুষ্ঠান।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অর্চনা বনিক বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হয়। তার আগে সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস।
অপরদিকে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য মোফাজ্জেল হোসেন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় বৃহস্পতিবার পুরোপুরি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ বিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষককে বিদ্যালয়ে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে জানতে প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
কনের বাবা ইয়ার উদ্দিন সিকদার বলেন, ‘একসময় বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলাম। আমার মেয়ে ওই দুই বিদ্যালয়েরই ছাত্রী ছিলেন। তারপরেও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অনুমতি নিয়েই মাঠে বিয়ের আয়োজন করেছি।’
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আশ্রাফুল ইসলাম রণি অনুমতি দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ইয়ার উদ্দিন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তাই তাকে অনুমতি দিয়েছি।’
বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক খান রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বিদ্যালয় বন্ধ রেখে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করার অনুমতি পরিচালনা পরিষদ দিতে পারেন না। এটা বেআইনি।
বরিশাল জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত নয়। তারপরও প্রধান শিক্ষক কাজটি ঠিক করেননি। এজন্য তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল লতিফ মজুমদার বলেন, ‘বিয়ের অনুষ্ঠান করার জন্য অনুমতি নেওয়ার জন্য আমার কাছে এসেছিলেন। অনুমতি দেইনি।